এনামুল হক খোকন//সময়নিউজবিডি
আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুরো জেলায় যার ছিল বিচরণ। জেলার সবকিছুই ছিলো তার নখদর্পনে। ছাত্রজীবন থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলীতে প্রতিটি কর্মযজ্ঞেই ফুটে উঠেছে সবার কাছে। যা পর্যায়ক্রমে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় গভীর ভালোবাসায় নিজেকে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। যার অঙ্গুলি ঈশারায় কঠিন ইস্পাত সমস্যা খুব সহজেই সমাধান হয়েছে। যা জেলার অন্য কোন রাজনৈতিক নেতার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। যখন থেকে তিনি বুঝতে শিখেছেন তখন থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত হয়েই ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে শুভ সূচনা করেন। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের সুখে দুঃখে ছুটে গিয়েছেন শহর থেকে গ্রামে, পথে প্রান্তরে সর্বত্র। তিনি যদিও একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু যে কোন রাজনৈতিক দল, যে কোন গোত্রের মানুষ তার কাছে কোন সমস্যা নিয়ে এসেছেন তিনি তাদের সমস্যা সমাধানে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তাঁর কাছ থেকে কেউ নিরাশ হয়ে ফেরেননি। তাঁর দরজা মানুষের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকতো।
অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির রাজনৈতিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, পারিবারিক জীবনে একজন সফল মানুষ ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে ছিলেন ন্যায় বিচারকের ভূমিকায়। জীবনে যতো সালিশ করেছেন কোন সালিশের পক্ষ বিপক্ষের লোকজন অমান্য করেননি। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, শিক্ষা ক্ষেত্রেও রেখেছেন অসামান্য অবদান। তিনি বিশ্বাস করতেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত জাতিই পারবে নিজের ঘর, সমাজ, দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে। সে স্বপ্ন নিয়ে তিনি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ গড়তেও ধর্মীয় নেতা সম্মানিত আলেম ওলামাদের সাথেও ছিলো তাঁর গভীর সম্পর্ক। নিয়মিত আলেম ওলামাদের সাথে যোগাযোগ রেখে মসজিদ মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যক্তিগত আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন যা বিভিন্ন সময় সম্মানিত আলেম ওলামাদের মুখ থেকে শুনা গেছে। এমনকি জীবনের শেষ বিদায়কালে জেলা শহরের কাজীপাড়াস্থ জেলা ঈদগাহ মাঠে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবিরের নামাজে জানাজায় বক্তব্যকালে একজন শীর্ষ আলেমের বক্তব্যে বলেছেন হুমায়ুন কবির আমাদের মসজিদ মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান দিয়েছেন।
এক নজরে আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবিরের বর্ণাঢ্য জীবনঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের মরহুম বজলুর রহমান ও মরহুম ওকিলুন্নেসার গর্ভে ১৯৫২ সালের ২ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযােদ্ধা আলহাজ্ব এডভােকেট হুমায়ুন কবির। তাঁর দুই ছেলে এনায়েত কবির বাবু ও একান্ত কবির এবং একমাত্র মেয়ে এলিন কবির। তাঁর স্ত্রী নায়ার কবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দিনদর্পণ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক তিনি।
শিক্ষা জীবন: তিনি ১৯৬৮ সালে জেলা শহরের স্বনামধন্য অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ১৯৭০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি, পরে একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৮১ সালে কুমিল্লা “ল” কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি পাশ করেন।
রাজনৈতিক জীবন: তিনি ১৯৬৮ সনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৬৯-৭০ সনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে “জয় বাংলা” প্যানেল গঠন করে তিনি ভিপি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ কুতুব হোসেন জিএস করে সব পদে প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি ভিপি, শেখ কুতুব হোসেন জিএস সহ পুরো “জয় বাংলা ” প্যাণেল নির্বাচিত হন, ১৯৭১ সনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন, ১৯৭৭ সনে পৌর নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে ১ম বার নির্বাচিত হন, ১৯৭৮ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৪ সনে ২য় বার পৌর চয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন, ১৯৮৬ সনে ৩য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৯ সনে ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন, ১৯৮৭ হতে ১৯৮৯ সন পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮৯ সনে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হন, একইসাথে ১২/১০/১৯৮৮ হতে ০২/১১/১৯৮৯ সনে জেলা পরিষদের চয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮৮-৮৯ সন পর্যন্ত রেডক্রস ও রেডক্রিসেট চেয়ারম্যান এর দায়িত্বপালন করেন। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সফল সাধারন সম্পাদক, ১৯৮৬ সালের ৩য় জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার দাবী করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বপরিবারে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং শহরে লিফলেট বিতরণ করেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান: ১৯৯৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজ, ১৯৮৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ডিগ্রি কলেজ, ২০০৫ সালে আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, ১৯৮২ সালে শহরতলীর ঘাটুরা গৌতমপাড়ায় বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হােমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ১৯৮৭ সনে হুমায়ুন কবির বিদ্যা নিকেতন, ১৯৮৮ সনে তােফায়েল আজম কিন্ডার গার্টেন, একই বছর ১৯৮৮ সালে হুমায়ূন কবির পৌর রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৮৭ সনে বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া এইচ.কে. রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৯৪ সনে হুমায়ূন কবির পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৯৫ সনে পৌর শহরের মধ্যপাড়ায় পলিকমল প্রি-ক্যাডেট স্কুল, ২০০১ সনে ফ্যাসিলিটিজ প্রকৌশলী অধিদপ্তর এর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের সাতবর্গ উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৯০ সনে সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেন।
এদিকে ১৯৮৭ সনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক্সচেঞ্জ সরাসরি ডায়ালিং পদ্ধতির শুভ উদ্বােধন করেন, ১৯৭৮ সনে পৌর কর্মী আবাস ও ১৯৯২ সনে পৌর শহরের মধ্যপাড়ায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি নাম না জানা আরাে অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশিষ্ট ছিলেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply